মোঃ খাইরুল ইসলাম চৌধুরীঃ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ১০নং কোটাকোল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী হাচান আল মামুদ ওরফে হাচান মোল্লার পারিবারিক ও রাজনৈতিক পরিচিতি তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা শ্যামল দাশ টিটু। হাচান মোল্যার সার্বিক পরিচয় তুলে তিনি বলেন, হাচান আল মামুদ কোটাকোল ইউনিয়নের মংগলপুর গ্রামের প্রয়াত আলী আকবর মোল্লার বড় ছেলে।
আলী আকবর মোল্লা ছিলেন বড়দিয়া অঞ্চলের আওয়ামী পাগল একজন সাহসী ও ত্যাগী নেতা। দেখতে বঙ্গবন্ধুর মতোই সুঠাম দেহের অধিকারী পাশাপাশি বজ্র কন্ঠের অধিকারীও ছিলেন তিনি। জিয়া এবং এরশাদের আমলে বড়দিয়া অঞ্চলে যখন অনেকে জয়বাংলার শ্লোগান দিতে ভয় পেত, তখন এই আকবর মোল্লাই জয়বাংলা বলে দাপিয়ে বেড়াতো সর্বত্র।
শ্যামল দাশ আরো বলেন, আমি ১৯৮৩ সালে মেট্রিক পাশ করে ইন্টার পড়ার জন্য খুলনা আজম খান কমার্স কলেজে ভর্তি হই। বড়দিয়া থেকে খুলনা যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যমে ছিল লঞ্চ। আকবর মোল্লা একটা লঞ্চের ম্যানেজার ছিলেন। একদিন খুলনা থেকে আসার পথে আমাদের কাছে লঞ্চ ভাড়া ছিল না। উনি যখন টিকিট কাটতে উপরে উঠে , আমরা তখন নীচে চলে যাই। আবার উনি যখন নীচে যায় আমরা তখন উপরে চলে আসি। এ পর্যায়ে উনি আমাদের ধরে ফেলেন এবং আমাদের পরিচয় জানতে চাইলে বলি বাড়ী বড়দিয়া। সাথে সাথে বলি আমরা কমার্স কলেজে ছাত্রলীগ করি (ছাত্রলীগ বলার কারণ ছিল আমরা উনাকে জানতাম বঙ্গবন্ধু পাগল একজন নেতা হিসেবে)। ব্যাস, সাথে সাথে আমাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, তোদের কখনো ভাড়া দেয়া লাগবে না। আমার লঞ্চে যাবি সবসময়। অন্য লঞ্চে গেলেও বলবি আকবর মোল্লার ছেলেপেলে আমরা। ছাত্রলীগের কথা বলার সাথে সাথে সেদিন উনার আবেগ আর উচ্ছ্বাস দেখে আমরা পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেছিলাম। সেই থেকে আকবর মোল্লাকে আওয়ামীলীগের একনিষ্ঠ একজন নেতা হিসেবে চেনা।
১৯৮৪ সালে খুলনা থেকে টুলু লঞ্চে জননেত্রী শেখ হাসিনার পরিবার গোপালগঞ্জ যাবার পথে আমারও সুযোগ হয় সাথে যাবার। বড়দিয়ার কাছাকাছি আসলে বড়দিয়া নামার জন্য অনেক অনুরোধ করি এবং আপা নামতে বাধ্য হন। বড়দিয়া নেমে একটা পথসভাও করেন। সেই থেকে আপা বড়দিয়াকে চেনেন ভালোভাবে।
বড়দিয়া নামার পরে উপস্থিত জনতার ঢল দেখে আপা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন । ২দিন পর আপার একটা জনসভা ছিল টুঙ্গিপাড়ায়। আমাদেরকে যেতে বলেন। আমরা কয়েকজন টুঙ্গিপাড়া গিয়ে দেখা করি এবং বড়দিয়া আঞ্চলিক শাখা আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ গঠন করার মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক থানার পদমর্যাদা দাবী করলেই মৌখিকভাবে অনুমোদন দেন। তারপর মাস খানেকের মধ্যেই আকবর মোল্লা, খান আব্দুল মতিন পেন্টু, শহীদ মোল্লা, মোস্তখাসহ অনেকের নেতৃত্বে বড়দিয়া আঞ্চলিক শাখা আওয়ামীলীগের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই আকবর মোল্লাই বড়দিয়া আঞ্চলিক শাখা আওয়ামীলীগের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জনাব বালাম মোল্লা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন জনাব শহীদ মোল্লা।
বড়দিয়া আঞ্চলিক শাখা আওয়ামীলীগ গঠন করার পর বড়দিয়া অঞ্চলে আওয়ামীলীগে প্রাণ ফিরে আসে। তখন এই আঞ্চলিক শাখা আওয়ামীলীগের কর্মকাণ্ড ছিল জেলা আওয়ামীলীগেরও প্রাণ। লোহাগড়া এবং কালিয়া থানা শাখা আওয়ামীলীগের থেকেও বড়দিয়া আঞ্চলিক শাখা শক্তিশালী ছিল। ঐ একই সময়ে নিরঞ্জন দাশ ঝন্টুদাকে সভাপতি এবং আমাকে সাধারণ সম্পাদক করে বড়দিয়া আঞ্চলিক শাখা ছাত্রলীগের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ছাত্রলীগের কমিটিও বেশ শক্তিশালী ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে বড়দিয়া কলেজ মাঠে বড়দিয়া কলেজ শাখা এবং আঞ্চলিক শাখা ছাত্রলীগের এমন একটা সম্মেলন করা হয়েছিল যা দেখে পংকজ দেবনাথ তার বক্তব্যে বলেছিলেন যে, মনে হচ্ছে কেন্দ্রীয় কোন সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছি।
এখানে উল্লেখ যে, ১৯৭৫ সালের পর অত্র এলাকায় ১৫ই আগষ্ট পালন করতে অনেকে ভয় পেত। শুনেছি ১৫ই আগষ্ট পালন করতে দেয়া হতো না। চুপিসারে কাঙালীভোজ বিতরণ করা হতো বড়দিয়া বাজারে। ১৯৮৫ সালে বড়দিয়া আঞ্চলিক শাখা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে আকবর মোল্লাই মাইক টাঙ্গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষন বাজিয়ে বড়দিয়ায় ১৫ই আগষ্ট পালন করা শুরু করেছিলেন।
আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেই। সেটা হলো, আমাদের বড়দিয়া অঞ্চলে এই আকবর মোল্লার বংশের সকলেই আওয়ামীলীগ পরিবারের সদস্য। বংশের কেউ কখনো অন্য দল করেনি। এটা আকবর মোল্লার বংশের ঐতিহ্য এবং অহংকার।
এবার আসা যাক, হাচান আল মামুদ ওরফে হাচান মোল্লা প্রসঙ্গে- হাচান মোল্লা সেই আওয়ামী পাগল আলী আকবর মোল্লার বড় ছেলে। আওয়ামী পাগল অহংকারী বংশের সন্তান। হাসান মোল্লাও ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে আজ অব্দি আওয়ামীলীগের একনিষ্ঠ ও নিবেদিত একজন কর্মী হিসেবে নিজেকে ধরে রেখেছে । অনেক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়েও কখনো বিচলিত হয়নি। অনেক হামলা মামলার শিকার হয়েও পথভ্রষ্ট হয়নি। টানা এক যুগ দল ক্ষমতায় থাকার পরেও তার ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি।
হাচান মোল্লারও রয়েছে বর্নাঢ্য এক রাজনৈতিক ইতিহাস। রাজনৈতিক জীবনে সে বড়দিয়া আঞ্চলিক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, বড়দিয়া কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং কোটাকোল ইউনিয়ন শখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছে একনিষ্ঠভাবে । বর্তমানে কোটাকোল ইউনিয়ন শাখা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে। সে দলের একজন ত্যাগী কর্মী হিসেবে নিজেকে আজও অবিচল রাখতে পেরেছে । তার বাবার আদর্শকে সমুন্নত রাখতে পেরেছে । এটাও তার কম অহংকার নয়। ছাত্র জীবনে হাসান আমার একজন একনিষ্ঠ ও নিবেদিত কর্মী ছিল এবং আজও আছে।
জননেত্রী শেখ হাসিনা এবার এই হাসান মোল্লাকে ১০নং কোটাকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নৌকার মাঝি করে পাঠিয়েছেন । এখন তাকে জয়লাভ করানোর দায়িত্ব দলের সকল নেতা ও কর্মীর এবং বেশী নৈতিক দায়িত্ব আমাদের বড়দিয়া অঞ্চলের আপামর জনসাধারণের। জয়বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু।