মোঃ আব্দুল হাকিম, প্রতিনিধি, রংপুর।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন লালদিঘী ৯ গম্বুজ মসজিদ। এটি লালদিঘী মসজিদ নামেই সমধিক পরিচিত। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নে মসজিদটি অবস্থিত। লালদিঘী নামক স্থানে অবস্থিত বলে মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে এলাকার নামেই। তবে এই মসজিদের বিশেষত্ব হলো, এর ভেতরে গরমকালে ঠান্ডা ও শীতকালে গরম থাকে।
জানা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে সর্বপ্রথম ঐতিহাসিক এ মসজিদটির সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে জরাজীর্ণ স্থানটিকে পরিষ্কার ও সংস্কারের মাধ্যমে এই মসজিদে নামাজ আদায় শুরু করেন স্থানীয়রা। মসজিদটির নির্মাণকাল সম্পর্কে কোনো শিলালিপি না থাকায় এর সঠিক তথ্য জানা যায়নি।
তবে লালদিঘী মসজিদ প্রতিষ্ঠার সময়কাল নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ না থাকলেও নির্মাণসামগ্রী, গম্বুজের নকশা, ছাদের সমতল বুরুজ ও ছোট আকার মসজিদের প্রাচীনত্ব এবং পাশে দুটি মাজার দেখে এটি ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত মসজিদ বলেই মনে করেন ইতিহাস গবেষকরা।
স্থানীয় গবেষক ও ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, জনৈক আসালাত খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির মূল দরজার ওপরের অংশে একটি দাগ বা চিহ্ন দেখে ধারণা করা হয়, সম্ভবত মসজিদটির নাম ও নির্মাণফলক বসানো ছিল। কিন্তু সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে সেই ফলকটি মুছে গেছে। মসজিদটি তৈরির সময় এতে শুধু ইট ও চুনসুরকি ব্যবহার করা হয়েছে।
বড় রংপুর কারামতিয়া কামিল মাদরাসার ফকিহ প্রধান ও গবেষক ড. মো. আজিজুল ইসলাম বলেন , দেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন লালদিঘী মসজিদ। ৯ গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৪৫ মিটার। পুরো মসজিদ একটি বেদির ওপর নির্মিত। বেদি বা মঞ্চটির উচ্চতা ১ মিটার। এক মিটার বেদির অর্ধেকটা জুড়ে রয়েছে মসজিদ ও বাকি অর্ধাংশ আজান দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হতো বলে ধারণা করা হয়ে থাকে।
মসজিদের সামনে রয়েছে বড় একটি প্রবেশপথ। মসজিদের অংশ থেকে বেদির অপর অংশে পৌঁছানোর জন্য রয়েছে একটি সিঁড়ি। মসজিদের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দেয়ালে তিনটি করে ৯টি প্রবেশপথ রয়েছে। প্রতিটি দেয়ালের মাঝের প্রবেশপথটি অপর দুটি থেকে কিছুটা বড় আকৃতির। মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি মেহরাব। যার মধ্যে কেন্দ্রীয় মেহরাবটি অপর দুটির চেয়ে বড় আকৃতির।
লালদিঘী মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন ১২০৪ বঙ্গাব্দে (১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দ) জমিদার আসালাত খাঁ ও তার স্ত্রী দিলারা খাঁ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশে রংপুরে এসেছিলেন। সে সময় লালদিঘীতে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন তারা। মসজিদের ভেতর তাদের মাজারও রয়েছে।
১৪ একর সম্পত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ছোট এই মসজিদ বর্ধিত অংশসহ বর্তমান আয়তন প্রায় ৩৫ শতাংশ। বাকি জমিতে লালদিঘী জান্নাতবাগ হাফিজিয়া এতিমখানা ও ফোরকানিয়া মাদরাসা, শান বাঁধানো একটি ছোট পুকুর, মসজিদের পাশে একটি কবরস্থান, মাদরাসা মাঠ ও সাপ্তাহিক হাট বসানোর জাগয়া রয়েছে।
ঐতিহাসিক ও দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপনাটি দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থী ও পর্যটকরা লালদিঘীতে ঘুরতে আসেন